বলিউডের বিখ্যাত কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়া-ই তাকে প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। ‘কাই পো চে’ ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। তাকেই বলিউডে পরিচালক হওয়ার প্রথম ধাপ পাশ করিয়ে দিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। পৃথিবীর যেমন নিয়ম আর কী, দেয়া-নেয়া।
যদিও বিষয়টা খানিকটা আলাদা হয়ে যায়। কারণ, পরিচালক মুকেশের প্রথম ছবি সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষ ছবি। শুক্রবার ২৪ জুলাইকে ‘দিল বেচারা দিবস’ বললেও ভুল বলা হবে না। কারণ, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর তার এই শেষ ছবি দেখার থেকেও বেশি ছিল ছবিটি উদযাপনের।
সুশান্তের সহকর্মী, প্রিয় মানুষ, বন্ধু, পরিবার এবং সর্বোপরি ফ্যানেরা এদিন সকাল থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলেন ‘দিল বেচারা’ দেখার জন্য। যারা ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’ দেখেছেন, তারাও যেন এই ছবিতে নতুন কিছু দেখার আশায় বসেছিলেন।
আসলে, সেটা ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় ও তাকে শেষবার স্ক্রিনে দেখার এক বিষাদময় আনন্দ। তবে এই ছবি দর্শকের মনে যেভাবে থেকে গেল, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসেও গড়ে তুলল রেকর্ড। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পায় সুশান্ত সিং রাজপুত ও সঞ্জনা সাংঘির ছবি ‘দিল বেচারা’। IMDB এই ছবির রেটিং দিয়েছে দশে ৯.৯। অর্থাৎ, ১০।
dill bechara গল্পটা খুব সহজ। ট্রেলারের শুরুতেই যেমনটা বলা হয় আর কী। ‘এক ছিল রাজা, এক ছিল রানি। দুই মরে গেল, শেষ কাহিনি।’ ছবিটাও ঠিক ততটাই। কিন্তু তারই মাঝে জীবনকে উপভোগ করার পাঠ রয়েছে গল্পের প্রতি ইঞ্চিতে। আর অদ্ভুত বিষয় হলো, যে মানুষটা এই জীবনের পাঠ দিতে দিতে গেলেন গোটা ছবিজুড়ে, তিনি আচমকাই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে।
সুশান্ত সিং রাজপুত, ছবিতে যার নাম ম্যানি। সেই কিজি অর্থাৎ সঞ্জনা সাংঘিকে শেখায় কী ভাবে বাঁচতে হয়। ছবিটা দেখতে দেখতে, এই মুহূর্তগুলোতে আপনার মনের মধ্যে এসে যেতে পারে, অভিনেতা সুশান্তের অসংখ্য সক্ষাৎকারের ছবি। যেখানে তিনি বলছেন, ‘আমি বড় করে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি।’
গল্পে রয়েছে, নায়িকার থাইরয়েড ক্যানসার। তাকে সর্বক্ষণ অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে বেড়াতে হয়। রেগি মিলারের জার্সিতে তার স্বপ্নের রাজকুমারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। আর অক্সিজেন পাইপের মাধ্যমেই ঘটে জীবনের প্রথম চুমু।
কিন্তু অত্যন্ত চাপে থাকা কিজি ও তার মা অভিনয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কিছুতেই যেন বুঝতে পারেন না জীবনকে নিয়ে কী ভাবে এগিয়ে যাবেন। আর সেখানেই সূর্যের রশ্মি হয়ে আলোকপাত ম্যানির। ছবিতে স্বস্তিকার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
করোনার কালবেলায় এই ছবি বড় পর্দায় মুক্তি পেল না। কিন্তু এই ছবি বড় পর্দায় দেখারই। কারণ, ছবিতে বড় মনের এক মানুষকে দেখানো হয়েছে ছোট ছোট জিনিসে কীভাবে বড় করে বাঁচা যায় তার পাঠ দিতে।
১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এই ছবির জন্য বড্ড কমই মনে হয়। কিন্তু শেষে রয়েছে একটা শূন্যতা। একটা মন খারাপের সুর। যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে… এমন একটা অনুভূতি। আর সত্যি হয়ও তাই।
সেলিব্রিটিদের পাশাপাশি দিল বেচারাকে নিয়ে নানা মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি শেয়ার করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুধু একটা অনুভূতিই আর কোনও দিন জানা যাবে না। ভার্সেটাইল অভিনেতার সংজ্ঞা দিতে হলে এরপর থেকে বলিউডপ্রেমীরা অবশ্যই সুশান্ত সিং রাজপুতের নাম নেবে।